চলতে পথে বিপদের সাথে এতটা সখ্যতা হবে তা কল্পনার মনের বাড়ীতে কোন দিন স্থান দেয়নি। সুরতের মোড়কে ঢেকে রেখেছি স্বজনদের কাছে আশ্রয় নেওয়া নিয়তির পাওনা সব বড় বড় বিপদগুলি।
আল্লাহর দেয়া এইসব পরীক্ষা সরল চিত্তে গ্রহণ করে নিয়েছি উপহার স্বরূপ। জগত মঞ্চের সব বিপদের অলিগলির সাথে পরিচয় থাকলে তা দৃঢ়তার সাথে অতিক্রম করতে সহায়তা করে।
বুকের উপর দিয়ে বেশ কিছু দিন শব্দহীন বিপদের প্রবেশ আর প্রস্থান চলছে বিরতিহীনভাবে। অসুখ নামক বেসুখ যেন নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে আমার পরিবারকে।
চারপাশে বিপদের দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে আছি তাতে বিচলিত বা ব্যথিত হচ্ছিনা মোটেও, শুধু ঘড়ির কাটার প্রবাহমান গতির সাথে ছুটতে গিয়ে হাপিয়ে যাচ্ছি রীতিমত। সময় হচ্ছে ধারালো অস্ত্র, তাকে ঠিক সময়ে ব্যবহারে ব্যর্থ হলে এক সময় নিজেকেই কেটে কেটে টুকরো টুকরো কর ফেলে।
সম্প্রতি ফেসবুকে আমার অনুপস্থিতি কিছু বন্ধু-স্বজনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে এড়াতে পারেনি। বেশ কয়েকদিন প্রশ্নের তীরে বিদ্ধ হচ্ছি ফেসবুক ইনবক্সে, কেন ফেসবুক মাঠে নেই, কেন এই অনুপস্থিতি?
তাদের জন্য সংক্ষিপ্ত বলা- গত ১০ জানুয়ারী সকাল ১০ টার দিকে গণগণে গরম পানিতে আমার সহধর্মিনীর বাম হাত ও গলার নিচে ঝলসে যায়। তা নিয়ে ব্যস্ততার অন্ত ছিল না। চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে ছুটাছুটিতেই বেশ সময় পার করেছি।
এ বিপদ কেটে না উঠতেই দেখা মেলে অপেক্ষায় থাকা আরেক বিপদের, আপন চাচাতো ভাইয়ের ছেলে, আমাদের ভাইপো বয়সে একদম তরুণ আকস্মিকভাবে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার দু’টি হাতই অকেজো হয়ে পড়ে। ঢাকা মেডিকেলের অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে তার দুটি হাতই কর্তন করা হয়। সেকি নিদারুণ কষ্ট যেন বুকের পাজর ভেঙ্গে ভেঙ্গে টুকরোতে পরিণত হয়েছে আমাদের সকলের। ঢাকা মেডিকেলে তার পাশে থেকে বার বার বাকরুদ্ধ হয়েছি। মায়ের বুকের ধন ছেলেটি বড়ই সম্ভাবনাময় ছিল আজ সে প্রতিবন্ধির খাতায় নামটি লিপিবদ্ধ করতে বাধ্য হল এ যেন জীবিত থেকেও মৃত।
৩১ জানুয়ারি আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ী তাদের মেয়ের গরম পানিতে দগ্ধ হওয়ার কথা শুনে অসুস্থ শরীর নিয়ে যশোর থেকে ট্রেন যোগে বিমানবন্দর স্টেশনে নামার আগে থেকেই শ্বশুর বড় ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
বাসায় নিতে নিতে আরোও দূর্বল হয়ে পড়েন তিনি আমরাও মানুষিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এখন মোটামুটি স্বাভাবিক পরিস্থির মধ্যে আছেন।
বেঁচে থাকার মোহ কিংবা আরোপিত সুখের নেশায় ছুটে চলার অপর নাম হয়তো জীবন, যাইহোক জীবন নামক এ বাহন যতদিন চলমান ততদিন বিকল ও স্বচল হতে হতে পৌছে যাবে এক ভিন্ন ঠিকানায় সে দিন হয়ত পৃথিবী নামক স্টেজে আর মঞ্চায়িত হবেনা কোন জীবন নাটকের। সকলের আন্তরিক দোয়ায় হয়ত স্বাভাবিকভাবে জীবন চলতে শক্তি যোগাবে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস